মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

গ্যাস মজুদ নির্ধারণে গয়া পন্ডিত



প্রতিদিনের মতো আজও সকালটা শুরু পত্রিকার পাতা উল্টিয়েই । পত্রিকায় নেই আলাদা কিছুই। নিত্যদিনের মতোই ঘটেছে সব ঘটনা। এসেছে অনেকটা গতদিনের মতোই কিন্তু একটু ভিন্ন রুপে, আলাদা ধাঁচে, আগের স্থানটি বদলে হয়তো অন্যস্থানে, ভিন্ন কারো হাতে কিংবা স্বরে।
বড় বড় পুকুরচুরির সংবাদও এখন আর আমাদের মনকে নাড়ায় না, বাড়ায় না আত্ম-সচেতনতা কোনো সমাজখাকি মহাব্যাধির পাতা পড়ে, উঠে না আগের মতো জাগরণী স্বর কোনো অন্যায়-অবিচারের খবর পড়ে। কেমন জানি এক অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে সব শুনা কিংবা পড়া।

এমনি ছিল জাতীয় দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর আজকের এক সংবাদ কয়েকটি ক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত দ্রুত কমছে” শিরোনামে। যেখানে একদিকে যেমন ছিল সংবাদকৃত দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর ভৌগলিক অবস্থান ও পরিসংখ্যান, অন্যদিকে তেমনি এর পিছনের চাবিওয়ালাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণাও।

সংবাদটির সবচেয়ে বড় ক্লাইম্যাক্স পয়েন্ট হচ্ছে, গ্যাস মজুদ নির্ধারণে পাহাড়সম অদক্ষতার প্রমাণ। প্রথম আলোর তথ্যমতে,এই ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের যে মজুত আছে বলে হিসাব করা হয়েছিল, তাতে এখনই তা ফুরিয়ে আসার কথা নয়।
বাপেক্সের সূত্র মতে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী পূর্বাচলে ২০১৪ সালে রূপগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রটি যখন আবিষ্কৃত হয় তখন ক্ষেত্রটিতে প্রায় ৩৪ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুত আছে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু এই বছরই ক্ষেত্রটি থেকে দৈনিক ৫০ লাখ ঘনফুট করে গ্যাস তোলা শুরু করার পর এখনই মজুত ফুরিয়ে গেছে। অথচ ক্ষেত্রটি থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট এক বিসিএফ গ্যাসও তোলা হয়নি।
আবার, নোয়াখালীর সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করা হয় ২০১২ সালে। এখানে ৫০ বিসিএফ গ্যাস মজুত আছে বলে হিসাব করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১০ বিসিএফ গ্যাস তোলার পরই ক্ষেত্রটির একমাত্র কূপটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারণ, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য আর গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
অনুরুপভাবে, খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে অবস্থান সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রের। এই ক্ষেত্রটির মোট মজুত হিসাব করা হয়েছিল ৩১৮ বিসিএফ। একসময় এখান থেকে দৈনিক ৩ কোটি ঘনফুট করেও গ্যাস তোলা হয়েছে। এখন তা নেমে এসেছে দৈনিক ২০ লাখ ঘনফুটে। এখন পর্যন্ত ক্ষেত্রটি থেকে সর্বমোট ১৩ বিসিএফের মতো গ্যাস তোলার পরই এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
 আবার, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ক্ষেত্রটিও অনেক পুরোনো। ১৯৮৪ সালে আবিষ্কৃত এই ক্ষেত্রটির মজুত নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩২৯ বিসিএফ। এখন পর্যন্ত গ্যাস তোলা হয়েছে সর্বমোট ১৫৩ বিসিএফ। এরই মধ্যে ক্ষেত্রটির দৈনিক উত্তোলন ক্ষমতা আড়াই কোটি ঘনফুট থেকে কমে ১ কোটি ২০ লাখ ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
এবং সালদা নদী গ্যাসক্ষেত্রটির অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। এই ক্ষেত্রের একমাত্র কূপ থেকে দৈনিক ১ কোটি ঘনফুট করে গ্যাস তোলা হতো। কিন্তু এখন তা ৩৫ লাখ ঘনফুটে নেমে এসেছে।
উপরোক্ত তথ্যগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র গুলোর মজুদ নির্ধারণে নির্ধারকদের যথেষ্ট অদক্ষতার প্রমাণ মেলে। হ্যাঁ, সবসময় যে গবেষণার ফল একই হবে তা কিন্তু আশা করা যায় না। তবে, ৩৪ বিপিএস এর জায়গায় ১ বিপিএস, ৫০ বিপিএস এর জায়গায় ১০ বিপিএস শেষ কিংবা ৩১৩ বিপিএস এর জায়গায় মাত্র ১৩ বিপিএসেই গ্যাস নাই নাই ভাব অনেকটা আষাড়ে গল্পের মতোই শুনাই না তো।
কিন্তু এর পিছনের কারণগুলোও বাতলে দিলেন বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম তামিম  বললেন, প্রথমত এ ঘটনায় মজুত নির্ধারণে বাপেক্সের অদক্ষতার প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া মজুত বেশি দেখিয়ে বেশি হারে বোনাস নেওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ দুই কারণ ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়।
এতো অদক্ষতার পরও কর্তৃপক্ষ শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পিছ পা যে নন তার প্রমাণ মেলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার দেয়া বিবৃতিতে। সুত্রগুলো জানায়, “যদিও এই ক্ষেত্রগুলো ছোট এবং মজুত কম, কিন্তু এগুলো থেকে উত্তোলিত মোট গ্যাসের পরিমাণ দৈনিক সরবরাহের হিসাবে নগণ্য নয়।”
কিন্তু প্রশ্ন মজুদ কম কিংবা বেশির নয়, প্রশ্ন হলো কেন মজুদ ধারণায় আকাশ-পাতাল তফাৎ ?

প্রশ্ন এও যে কিভাবে এমন অদক্ষ কর্মীরা কোনো প্রশিক্ষণ ব্যতিরেকেই প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ধারণের মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতের ধারণা দিচ্ছেন ? কিংবা দক্ষ ব্যক্তিরা অদক্ষতার মুখোশ পরে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে পার পেয়ে যাচ্ছেন ? কেন কোনো জবাবদিহিতা নেই ? নাকি সবই ঘটছে এর পিছনের স্বার্থনেশি মহলের হাতের ছোঁয়ার জাদুর প্রভাব ? যা চলছে, চলবে রুখবে না কখনো তা আইন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন