মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১৮

সভ্য নামের পশু আমরা !!!



আজ যে বোন রাস্তায় বখাটেদের উত্যক্ত কিংবা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা যতটুকু না বখাটেদের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকি তারচেয়ে বুঝি দ্বিগুণহারে লাঞ্ছিত বোনের পোষাক-আশাকের সমালোচনা করে থাকি
সমাজে এক মহামারি ব্যাধির দেখা দিয়েছে উত্যক্ত কিংবা ধর্ষণের মতো সংবাদে অধিকাংশকে বলতে শুনি সব কাটা পোষাকের দোষ, ভারতীয় চ্যানেলের দোষ । এইসব চ্যানেল কিংবা পোষাকের বদৌলতেই নাকি মেয়েটি আজ উত্যক্ত কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছে সত্যই কি তাই ?
কথায় কথায় আমাদের মধ্যে যারা ধর্মের রাশি টেনে ধরি তাদের কাছে জানতে চাই, হযরত ইউসুফ (আঃ) কে যখন জুলেখা সঙ্গমের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন জুলেখার পরিহিত পোষাক কি আজকের এই লাঞ্ছিত বোনের পোষাকের চেয়ে অশোভন ছিল না ? নাকি ইউসুফ (আঃ) এর পুরুষত্বের কোনো প্রশ্ন ছিল ?
চিরন্তন সত্য তো এটাই যে সেখানে ইউসুফ (আঃ) কে আটকিয়েছিল তাঁর উত্তম চরিত্র ধর্ম কোনো পোষাক নয় ।
আবার যখন সিন্ধুরাজ জয়দ্রত পঞ্চপান্ডবের স্ত্রী পাঞ্চালীকে লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা করেছিল তখনো পাঞ্চালীর পোষাক নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ ছিল না । কিন্তু তারপরও সে লাঞ্ছিত হয়েছে। পোষাক তাকে বাঁচাতে পারে নি ।
মোদ্দা কথা তো এটাই যে, উন্মাদ-হিংস্র কুকুরের উন্মাদনায় কোনো কারণ লাগে না ।

শুধু যে মেয়েরা রাস্তায় লাঞ্ছিত হচ্ছে তা নয়, আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে  যৌনোন্মাদ কুকুরে ভরে গিয়েছে। আজ আমাদের বোনেরা কর্মস্থলে তার বসের কাছে নিরাপদ বোধ করে না । নিরাপদ বোধ করতে ভয় পায় তাঁর সহকর্মীর সঙ্গকেও । আজ তাঁরা নিজ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এমনকি নিজ পরিবারের লোককেও বিশ্বাসে ভয় পেতে শুরু করেছে ।
প্রকৃতপক্ষে, পোষাক লাঞ্ছনার কোনো কারণ নয় । কারণ হিসেবে যদি কোনো কিছুকে দায়ী হতেই হয় তবে তা সভ্য মানুষের মুখোশধারী আমরা ও আমাদের নিশ্চুপ প্রবৃত্তি ।

তাই আসুন, লাঞ্ছিত বোনের দিকে আঙ্গুল না তুলে সমাজের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা শরীরের গন্ধশুকো পশুদের বিরুদ্ধে স্বর তুলি এবং নিজ সন্তানদেরকে আদর্শ চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি ।
আমি আশাবাদী, এভাবেই আমরা এক সভ্য ও নিরাপদ সমাজ গড়তে পারি ।